লংগদুতে বিজিবির হস্তক্ষেপে পাহাড়ি–বাঙালি বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:

রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার চরুয়াখালী এলাকায় পাহাড়ি–বাঙালি জমি সংক্রান্ত বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। রাজনগর জোনের অধীনস্থ চরুয়াখালী বিজিবি ক্যাম্পের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় এ বিরোধের সূত্রপাত হয় আজিজুল হক ও জজ মিয়া কর্তৃক পাহাড়িদের নিকট হতে জমি ক্রয়কে কেন্দ্র করে।

জানা যায়, আজিজুল হক সিদ্দিক সূশীলময় চাকমার কাছ থেকে এবং জজ মিয়া সুমন চাকমার কাছ থেকে আদালতের এফিডেভিটের মাধ্যমে পাহাড়ি জমি ক্রয় করেন। পরবর্তীতে জমি বিক্রির ঘটনায় স্থানীয় পাহাড়িদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে বিজিবি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার মিমাংসার চেষ্টা করলেও পাহাড়িদের অনীহার কারণে তা সফল হয়নি।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে পাহাড়ি ও বাঙালি উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যাতে কয়েকটি বসতঘর ভাঙচুর হয়। পরবর্তীতে থানায় মামলা দায়ের করা হলে পুলিশ তিনজন বাঙালিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। এতে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিজিবি ২২ অক্টোবর ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি ও বাঙালি—মোট পাঁচটি পরিবারকে (পাহাড়ি ৩, বাঙালি ২) নগদ অর্থ, খাদ্য ও বস্ত্র সহায়তা প্রদান করে।

বিরোধের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) চরুয়াখালী বিজিবি ক্যাম্পের সম্মুখে রাজনগর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল নাহিদ হাসান এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমেনা মারজানের উপস্থিতিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অংশগ্রহণে এক সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আজিজুল হক তার ক্রয়কৃত ও ভোগদখলীয় জমিতে বসবাস করবেন। অপরদিকে জজ মিয়া কর্তৃক ক্রয়কৃত জমির পরিবর্তে অন্যত্র জমি প্রদানের বিনিময়ে এবং পাহাড়িদের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষই সন্তুষ্টি প্রকাশ করে জানান, ভবিষ্যতে এ নিয়ে আর কোনো বিরোধ সৃষ্টি হবে না। পাশাপাশি তারা পরস্পরের দায়েরকৃত মামলাগুলো আপোষের মাধ্যমে নিষ্পত্তির অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

রাজনগর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল নাহিদ হাসান বলেন,

“সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিজিবি সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানের মাধ্যমে যেকোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণভাবে মিমাংসা সম্ভব—এ বিশ্বাসে বিজিবি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”

বৈঠকের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়ায় এলাকায় স্বস্তি ও সৌহার্দ্যের পরিবেশ ফিরে এসেছে।